
ইসলামে ধর্ষণের শাস্তি: আইন ও উদাহরণ
Published on 10 March, 2025 by Humaun Kobir
ইসলাম ধর্ষণকে (ধর্ষণ বা জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক) অত্যন্ত জঘন্য ও গর্হিত অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে। এটি শুধুমাত্র ব্যক্তির ওপর সহিংসতা নয়, বরং এটি সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করে। ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী, ধর্ষণ ব্যভিচারের চেয়েও গুরুতর অপরাধ এবং এর জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।
ধর্ষণের শাস্তি ইসলামে
ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী, ধর্ষণকে "জিনা বিল জবর" (জোরপূর্বক ব্যভিচার) বলা হয় এবং এটি হাদুদ অপরাধ (যে অপরাধের জন্য নির্দিষ্ট শাস্তি রয়েছে) হিসাবে গণ্য হয়।
১. যদি ধর্ষক বিবাহিত হয়
📌 শাস্তি: ব্যভিচারের মতোই প্রস্তর নিক্ষেপ করে (পাথর মেরে) মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে।
📖 রাসূল (সাঃ) বলেছেন:
"যদি কোনো বিবাহিত ব্যক্তি ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তবে তাকে পাথর মেরে হত্যা করা হবে।"
📖 (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৪৪০৩)
২. যদি ধর্ষক অবিবাহিত হয়
📌 শাস্তি: তাকে ১০০ বেত্রাঘাত ও এক বছর দেশান্তর (নির্বাসন) দেওয়া হবে।
📖 আল্লাহ বলেন:
"ব্যভিচারিণী নারী ও ব্যভিচারী পুরুষ, তাদের প্রত্যেককে একশ’ বেত্রাঘাত করো।"
📖 (সূরা আন-নূর ২৪:২)
৩. যদি ধর্ষক অস্ত্র বা জোর খাটিয়ে অপরাধ করে
📌 শাস্তি: এই ক্ষেত্রে ধর্ষককে শিরচ্ছেদ (মাথা কাটা), ক্রুশবিদ্ধ করা, হাত-পা কেটে দেওয়া, অথবা নির্বাসন (দেশ থেকে বহিষ্কার) করা হতে পারে।
📖 আল্লাহ বলেন:
"যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চেষ্টা করে, তাদের শাস্তি হলো শিরচ্ছেদ করা, ক্রুশবিদ্ধ করা, বিপরীত দিক থেকে হাত-পা কেটে ফেলা অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা।"
📖 (সূরা আল-মায়েদা ৫:৩৩)
ধর্ষিতার (ভুক্তভোগীর) জন্য ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
✅ ভুক্তভোগী নির্দোষ: ধর্ষণের শিকার নারী বা পুরুষকে ইসলাম কোনোভাবেই অপরাধী মনে করে না। বরং তারা নিরপরাধ এবং তাদের সম্মান ও অধিকার রক্ষা করা ইসলামের নৈতিক দায়িত্ব।
✅ ইজ্জতের ক্ষতিপূরণ: ইসলামী আইন অনুযায়ী, ধর্ষিতাকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ (দিয়া) দেওয়া যেতে পারে, যাতে তার সামাজিক ও মানসিক ক্ষতি পূরণ হয়।
✅ চারজন সাক্ষীর নিয়ম ধর্ষণে প্রযোজ্য নয়: ব্যভিচারের জন্য চারজন সাক্ষী প্রয়োজন হলেও ধর্ষণের ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর অভিযোগ ও ফরেনসিক প্রমাণই যথেষ্ট।
ইসলামের ইতিহাস থেকে ধর্ষণের শাস্তির উদাহরণ
১. খলিফা উমর (রা.) এর শাসনকালে ধর্ষণের শাস্তি
একবার একজন ব্যক্তি এক মহিলাকে ধর্ষণ করলে হযরত উমর (রা.) সেই ধর্ষককে মৃত্যুদণ্ড দেন। এখানে চারজন সাক্ষীর শর্ত প্রযোজ্য ছিল না, বরং ভুক্তভোগীর অভিযোগ ও অন্যান্য প্রমাণের ভিত্তিতে এই শাস্তি কার্যকর করা হয়।
২. এক দাসীকে ধর্ষণের ঘটনা
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সময় এক ব্যক্তি এক দাসীকে ধর্ষণ করলে নবী (সাঃ) তাকে কঠিন শাস্তি দেন এবং বলেন যে ধর্ষিতার কোনো দোষ নেই।
উপসংহার
ইসলামে ধর্ষণ একটি গুরুতর অপরাধ, যার জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। এটি শুধু ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, বরং সমাজের বিরুদ্ধে অপরাধ। ইসলামী আইন অনুযায়ী, ধর্ষকের জন্য মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত শাস্তি রয়েছে এবং ভুক্তভোগীকে সর্বোচ্চ সম্মান ও নিরাপত্তা প্রদান করতে বলা হয়েছে।
🔹 আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই ঘৃণ্য অপরাধ থেকে রক্ষা করুন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করুন। আমিন।