বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতে উন্নতি: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতে উন্নতি: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

Published on 02 March, 2025 by Humaun Kobir

বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাত গত কয়েক দশকে অভূতপূর্ব উন্নতি করেছে। তথ্যপ্রযুক্তি, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ই-কমার্স, ফ্রিল্যান্সিং এবং স্টার্টআপ সংস্কৃতিতে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। সরকারি ও বেসরকারি খাতের উদ্যোগের ফলে দেশ এখন ডিজিটালাইজেশনের পথে অনেকদূর এগিয়ে গেছে। তবে, এই অগ্রগতির পাশাপাশি বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে, যা মোকাবিলা করা জরুরি।

প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি

১️ ডিজিটাল বাংলাদেশ উদ্যোগ:

সরকারের "ডিজিটাল বাংলাদেশ" পরিকল্পনার ফলে ই-গভর্ন্যান্স, অনলাইন সেবা, ই-কমার্স, এবং তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এখন জাতীয় পরিচয়পত্র (NID), পাসপোর্ট, জন্ম নিবন্ধনসহ বিভিন্ন সরকারি পরিষেবা অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে।

২️ আইটি ও সফটওয়্যার শিল্পের বিকাশ:

বাংলাদেশের সফটওয়্যার ও আইটি পরিষেবা খাত দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (BASIS) এবং সরকারের আইসিটি বিভাগ নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য নানান সুবিধা প্রদান করছে।

৩️ ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং খাত:

বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে অন্যতম বৃহত্তম অবদানকারী দেশ। আপওয়ার্ক, ফাইভার ও ফ্রিল্যান্সার ডটকমের মতো প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশের লক্ষাধিক তরুণ কাজ করছে, যা দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে।

৪️ ই-কমার্স ও ডিজিটাল লেনদেন:

করোনা মহামারির পর থেকে ই-কমার্স ব্যবসা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দারাজ, রকমারি, চালডাল, গ্রোসারি বাজারের মতো ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ, নগদ, রকেট) ও ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমও প্রযুক্তিখাতকে আরও গতিশীল করেছে।

৫️ স্টার্টআপ সংস্কৃতির বিকাশ:

বিভিন্ন প্রযুক্তিভিত্তিক স্টার্টআপ, যেমন পাঠাও, শপআপ, অগ্নি, ওজোন এগিয়ে আসছে। সরকার স্টার্টআপদের জন্য বিভিন্ন অনুদান ও প্রণোদনা দিচ্ছে, যা তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য বড় সুযোগ।

প্রযুক্তি খাতের প্রধান চ্যালেঞ্জ

সাইবার নিরাপত্তার ঝুঁকি:

প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে সাইবার অপরাধও বাড়ছে। হ্যাকিং, তথ্য চুরি, ও অনলাইন জালিয়াতির ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য দক্ষ জনবল প্রয়োজন।

উন্নত প্রযুক্তি ও গবেষণার অভাব:

বাংলাদেশে উচ্চমানের গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D) খাত এখনো তেমন শক্তিশালী হয়নি। উন্নত দেশগুলোর মতো ইনোভেশন ল্যাব, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তিতে গবেষণা আরও বাড়ানো প্রয়োজন।

ইন্টারনেট গতি ও ব্যয়:

দেশের অনেক এলাকায় এখনো উচ্চগতির ইন্টারনেট সহজলভ্য নয়। শহর অঞ্চলে ইন্টারনেট সুবিধা ভালো হলেও গ্রামাঞ্চলে এই সুবিধা সীমিত। পাশাপাশি ইন্টারনেটের ব্যয়ও অনেক দেশের তুলনায় বেশি।

দক্ষ মানবসম্পদের ঘাটতি:

যদিও বাংলাদেশে বিপুলসংখ্যক তরুণ রয়েছে, তবে প্রযুক্তিখাতে দক্ষ কর্মীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। বিশেষ করে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, মেশিন লার্নিং, ডাটা সায়েন্স, এবং সাইবার সিকিউরিটিতে দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে।

বিদেশি বিনিয়োগের সীমাবদ্ধতা:

প্রযুক্তি খাতে বিদেশি বিনিয়োগ এখনো আশানুরূপ পর্যায়ে পৌঁছায়নি। নীতিমালার জটিলতা ও অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত।

সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

🔹 উন্নত আইটি শিক্ষা: দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইটি শিক্ষা উন্নত করতে হবে এবং প্র্যাকটিক্যাল স্কিল শেখানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

🔹 সাইবার নিরাপত্তা জোরদার: সরকারের উচিত সাইবার নিরাপত্তা আইন কঠোর করা এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তথ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

🔹 উন্নত ইন্টারনেট কাঠামো: শহর ও গ্রামে সমান গতির ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে এবং ব্যয় কমাতে হবে।

🔹 বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ: ট্যাক্স ছাড়সহ নানান সুবিধা দিয়ে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আকৃষ্ট করতে হবে।

🔹 স্টার্টআপ ও উদ্ভাবন: প্রযুক্তিভিত্তিক স্টার্টআপকে আরও সহায়তা দিতে হবে, যাতে তরুণ উদ্যোক্তারা নতুন নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে পারে।

উপসংহার

বাংলাদেশ প্রযুক্তি খাতে অভাবনীয় উন্নতি করলেও এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা মোকাবিলা করতে হবে। দক্ষ জনবল তৈরি, গবেষণা বৃদ্ধি, এবং উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশ দ্রুতই বিশ্ব প্রযুক্তি বাজারে আরও শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারবে।


আপনার মতামত কী? বাংলাদেশ কিভাবে প্রযুক্তিতে আরও এগিয়ে যেতে পারে? মন্তব্য করুন!