
দুর্নীতির শাস্তি ইসলামে: আইন ও উদাহরণ
Published on 10 March, 2025 by Humaun Kobir
ইসলামে দুর্নীতি (দুর্নীতি অর্থাৎ ঘুষ, প্রতারণা, সম্পদ আত্মসাৎ ইত্যাদি) একটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। ইসলামic শরিয়াহ আইন অনুযায়ী, দুর্নীতির শাস্তি নির্ধারিত হয় অপরাধের ধরন ও মাত্রার উপর ভিত্তি করে। কুরআন ও হাদিসে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে এবং শাস্তির বিধানও দেওয়া হয়েছে।
ইসলামে দুর্নীতির সংজ্ঞা
দুর্নীতি বলতে বোঝায় অসৎ উপায়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করা। এটি বিভিন্ন রকম হতে পারে, যেমন:
- ঘুষ (Bribery) – অবৈধ সুবিধা লাভের জন্য টাকা বা উপহার গ্রহণ বা প্রদান করা।
- প্রতারণা (Fraud) – মিথ্যা বলা, চুক্তিভঙ্গ করা বা ধোঁকাবাজির মাধ্যমে সম্পদ অর্জন করা।
- সম্পদ আত্মসাৎ (Embezzlement) – সরকারি বা প্রতিষ্ঠানের অর্থ নিজের স্বার্থে ব্যবহার করা।
- অন্যায় সুদ (Riba) – অর্থনৈতিক শোষণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
- ন্যায়বিচার বিকৃতি (Perverting Justice) – ন্যায়বিচারের বিপরীতে পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
কুরআন ও হাদিসে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সতর্কবাণী
১. কুরআনে দুর্নীতির নিন্দা:
আল্লাহ বলেন:
“এবং তোমরা একে অপরের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিছু অংশ জেনে-শুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার জন্য বিচারকদের কাছে উপস্থাপন করো না।”
(সূরা আল-বাকারা ২:১৮৮)
“নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অন্যায় ও পাপাচার এবং অবাধ্যতায় লিপ্ত হতে নিষেধ করেন।”
(সূরা আন-নাহল ১৬:৯০)
২. হাদিসে দুর্নীতির শাস্তির বিবরণ:
🔹 রাসূল (সাঃ) বলেছেন:
"ঘুষ প্রদানকারী ও গ্রহণকারী উভয়ই জাহান্নামী।"
(তিরমিজি, হাদিস নং ১৩৩৭)
🔹 তিনি আরও বলেন:
"যে ব্যক্তি আমাদের কাজের দায়িত্ব নেবে এবং আমাদের সম্পদ থেকে কিছু লুকিয়ে রাখবে, সে কিয়ামতের দিনে তা বহন করে আসবে।"
(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১৮৩২)
ইসলামে দুর্নীতির শাস্তি
দুর্নীতির শাস্তি নির্ভর করে এর প্রভাব ও ক্ষতির মাত্রার উপর। নিম্নে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শাস্তির বিধান উল্লেখ করা হলো:
অপরাধের ধরনশাস্তি | |
ঘুষ গ্রহণ বা প্রদান | আল্লাহর গযব, দোয়া কবুল হয় না, কিয়ামতে কঠিন শাস্তি |
সম্পদ আত্মসাৎ | চুরির শাস্তির মতো কঠিন দণ্ড (হাদুদ শাস্তি প্রযোজ্য হলে) |
প্রতারণা ও ধোঁকাবাজি | ইসলামী রাষ্ট্রের নীতির উপর নির্ভর করে জরিমানা, কারাদণ্ড বা অন্যান্য শাস্তি |
সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ | সম্পদ ফেরত দিতে বাধ্য করা হবে, গুরুতর হলে কঠিন শাস্তি |
ইতিহাস থেকে কিছু উদাহরণ
১. হযরত উমর (রা.) এর ন্যায়বিচার
হযরত উমর (রা.) তাঁর শাসনামলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন। একবার তিনি এক গভর্নরকে বেশি সম্পদ অর্জন করতে দেখে তদন্ত করেন এবং অতিরিক্ত সম্পদ রাষ্ট্রের কোষাগারে ফিরিয়ে নেন।
২. রাসূল (সাঃ) এর হুকুম
এক ব্যক্তি যুদ্ধলব্ধ সম্পদ আত্মসাৎ করলে রাসূল (সাঃ) বলেছিলেন,
"যে ব্যক্তি মানুষের সম্পদ চুরি করবে, কিয়ামতের দিনে সে সেই চুরি করা সম্পদ নিয়ে উপস্থিত হবে এবং তার শাস্তি হবে।"
(সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৩০৭৪)
৩. এক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বরখাস্ত
হযরত উসমান (রা.) এক শাসনকর্তাকে বরখাস্ত করেছিলেন, কারণ তিনি জনগণের সম্পদ আত্মসাৎ করছিলেন।
উপসংহার
ইসলাম দুর্নীতিকে অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ হিসেবে গণ্য করে এবং এটি নির্মূলের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রেখেছে। একজন মুসলিমের উচিত আল্লাহর ভয় রেখে সততার সাথে কাজ করা এবং অন্যায়ভাবে সম্পদ উপার্জন করা থেকে বিরত থাকা। ন্যায়বিচার ও সততা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই সমাজ থেকে দুর্নীতি দূর করা সম্ভব।
🔹 আল্লাহ আমাদের সবাইকে হালাল পথে চলার তৌফিক দান করুন। আমিন।